Pages

Sunday 23 August 2009

রাখালের কলাম : ষড়যন্ত্র এখনও চলিতেছে

রাখালের কলাম--------------
ষড়যন্ত্র এখনও চলিতেছে

বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিধর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি সম্প্রতি বলিয়াছেন, বাঙালির একটি দোষ তাহারা সবকিছুতেই ষড়যন্ত্র দেখে। হ্যাঁ, ষড়যন্ত্র দেখাটা খুবই অন্যায়, ষড়যন্ত্র করাটা মোটেই অন্যায় নহে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হইতেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্রকারী। তাহাদের বিদেশনীতি এবং কূটনীতি বারোআনী হইতেছে ষড়যন্ত্র-হত্যাকান্ড--অন্তর্ঘাত, রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাস পরিচালনা, সংঘাত-সংঘর্ষ-গণহত্যা ও প্রকাশ্য যুদ্ধ। মার্কিনীরা নিজেদের আইন, আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের আইন, শত সহস্র বৎসর ধরিয়া গড়িয়া ওঠা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করিতেছে। তাহাদের ভাষায় ‘মার্কিন স্বার্থ’ রক্ষায় জগতে এমন কোনো অপরাধ নাই যাহা করিতে তাহারা দ্বিধা করে। মার্কিনীরা পুঁজিবাদী যে নিয়ম-কানুন রীতিনীতি আছে প্রয়োজনে তাহাও লঙ্ঘন করিতে পিছপা হয় না। যে ব্রিটেন উডস্ সমঝোতার মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিওটিও-র জন্ম সেই সমঝোতাও এককভাবে প্রথম লঙ্ঘন করিয়াছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশে সাম্রাজ্যবাদীদের কী নীতি হয় তাহা খুব স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার এ্যাটলি। “Britain has no principles beyond its borders only interests. অর্থাৎ“ব্রিটেনের সীমান্তের বাহিরে তাহার কোনো নীতি নাই, আছে শুধু স্বার্থ”।
সারা বিশ্বে কত হত্যা সন্ত্রাস সংঘঠিত হইয়াছে এই মার্কিনীদের নির্দেশে তাহার কোনো ইয়ত্তা নাই। তথ্য অধিকার আইন অনুসারে সিআইএ-সহ বিভিনড়ব সংস্থার কিছু কিছু দলিলপত্র প্রকাশিত হইতেছে। সাম্প্রতিক কালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড-কে কেন্দ্র করিয়া বিভিনড়ব মার্কিন দলিলপত্র প্রকাশিত হইয়াছে। প্রথম
আলো পত্রিকায় তাহা লইয়া বিস্তারিত ও গবেষণামূলক লেখা প্রকাশিত হইয়াছে। তবে এখনও প্রকাশিত দলিলপত্রে দেখা যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ লাইন বোঝা যাইতেছে না, অথবা কালো কালি দিয়া কাটিয়া দেওয়া হইয়াছে। তবু যাহা জানা যায় তাহা লোমহর্ষক।
যাহা হউক, আসল কথায় আসি। মরিয়ার্টি সাহেব হঠাৎ করিয়া কেন বলিলেন, বাঙালিরা সবকিছুতেই ষড়যন্ত্র দেখে! তিনি এবং তাহার উর্ধ্বতন কর্তারা কিছুদিন আগে সাফাই গাহিয়াছেন, আমরা ১/১১-এর সহিত জড়িত ছিলাম না। একে একে কয়েকজন রাষ্ট্রদূত এইরূপ সাফাই গাহিয়াছেন। সেইসব লইয়া গত সংখ্যায় আলোচনা করিয়াছি। তাহাদের কথা সত্য হইলে বুঝিতে হইবে, ‘প্রিন্স অব ডেনমার্ক’ ছাড়াই ‘হ্যামলেট’ নাটকটি মঞ্চস্থ হইয়াছে। শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক ‘হ্যামলেট’। হ্যামলেট ছিলেন প্রিন্স অব ডেনমার্ক অর্থাৎ ডেনমার্কের যুবরাজ। তাহাকে ছাড়া ‘হ্যামলেট’ কিভাবে মঞ্চস্থ হইতে পারে।
১/১১-এর পর ফখরুদ্দিন সাহেবের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাহারা উপস্থিত ছিলেন তাহারা দেখিয়াছেন কিভাবে বিজয়ীর বেশে মিজ বিউটিনেস, মিজ রেনেটা প্রমুখ দরবার হলে প্রবেশ করিলেন। হাত মিলাইলেন, পরস্পরকে চুম্বন করিলেন। সেই চুম্বন গিয়ে আমাদের সংবিধান বিশারদ ড. কামাল হোসেনের গন্ড-দেশেও পতিত হওয়ার উপμম হইয়াছিল। কিন্তু হায়! কোথা হইতে টিভি ক্যামেরা ও ফটো সাংবাদিকরা আসিয়া পড়িল। পারস্পরিক অভিনন্দনের পথে বেরসিক ছেদ পড়িল!
গত লেখায় ১/১১-এর ধারা শেষের দিকে যাইয়া কীভাবে ‘ইউটার্ন’ হইল তাহার কিছু বর্ণনা দিয়াছি। আমরা আমজনতা মঞ্চের অভিনয় দেখি। কিন্তু মঞ্চের পশ্চাতে বা পার্শ্বে অথবা ড্রেসিং রুমে কি ঘটিতেছে, কিভাবে মেকআপ লইতেছে, পোষাক বা ভেক পাল্টাইতেছে, পরচুলা লাগাইতেছে, ড্রপ সিন বা পর্দার আড়ালে কিভাবে মঞ্চের সজ্জা ও দৃশ্যপট পরিবর্তিত হইতেছে, কিভাবে প্রম্টার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ডায়লগ বলিতেছে তাহা দেখিতে পাই না। তবুও অনেক সময় দুষ্ট লোকেরা লুকাইয়া কিছুটা দেখিয়া ফেলে। সেই কথাগুলি মুখে মুখে ছড়াইয়া পড়ে। কখনও ভাব রং চং চড়ান হয়। কিন্তু সেই সব একেবারে মিথ্যা বলিয়া উড়াইয়া দেওয়ার উপায় নাই।
শোনা যায় ‘ইউটার্ন’ করিবার পূর্বক্ষণে জনৈক মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সহিত সাক্ষাৎ করিয়া কিছু আলোচনা করিয়াছিলেন। তাহার পর পরই বাংলাদেশের জনৈক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ঐ বিশিষ্ট ব্যক্তির সহিত সাক্ষাৎ করেন। সেই
ব্যক্তি বন্দি শেখ হাসিনার সহিতও দেখা করিয়া কথাবার্তা বলেন। অপরদিকে বন্দি খালেদা জিয়ার সহিতও তাহার দলের লোকজন দেখা করেন। দুই দিকে প্রকাশ্য এবং আনুষ্ঠানিকভাবেও আলোচনা হয়। ইহার পর একের পর এক জামিন, মুক্তি এবং হাসিনা, তারেকসহ অনেকের বিদেশ গমন।
ইতোমধ্যে নাকি একটি ব্যর্থ ক্যু প্রচেষ্টা হইয়াছিল। উহার লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা ও তারেককে হত্যা করিয়া ক্ষমতা দখল। গ্রীসে সফররত সেনা প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদকে দ্রুত দেশে ফিরাইয়া আনা হয়। পরবর্তীকালে দেশে-বিদেশে কূটনীতিকরা দুই নেত্রীসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে অসংখ্যবার আলোচনা করেন। আজিকার দিনের ঘটনাবলি ও ষড়যন্ত্র বুঝিতে হইলে সেই আলোচনা, সমঝোতা যাহাই হউক না কেন জানা প্রয়োজন। সবটুকু হয়ত বা কখনই জানা যাইবে না। কিন্তু ইতিহাস ও পরবর্তী বাস্তব ঘটনাবলী অনেক কিছুরই জট খুলিয়া দিবে।
১/১১ ঘটনাবলী ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ দিয়া শুরু হইয়াছিল। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর সেইসব চক্রান্ত ও ফর্মুলা শেষ হইয়াছে বলিয়া আমরা সবাই ধারণা করিয়াছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের পর দু-একজনকে বলিতে শুনিয়াছি, খেলা তো কেবল শুরু হইল। আরও বড় খেলা সামনে আছে। তাহাদের কথা হাসিয়া উড়াইয়া দিয়াছিলাম। মারিয়ার্টিরও বহু আগে কমরেড রাশেদ খান মেনন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিরোধিতা করিয়া বিশেষত বাম বন্ধুদের সতর্ক করিয়া দিয়াছিলেন। অবশ্য অতীত অভিজ্ঞতা একটি বড় শিক্ষা। পিকিংপন্থিরা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবির পিছনে ষড়যন্ত্র দেখিয়া উহার বিরোধিতা করিয়াছিলেন। মস্কোপন্থিরা ৬ দফার ভিত্তিতে ৭ জুনের হরতাল সমর্থন করিয়াও পরিপূর্ণ দাবিনামায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতার দাবি, প্রগতিমুখিন আর্থ-সামাজিক দাবি ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দাবি অন্তর্ভুক্ত করিবার জন্য প্রচারণা চালাইয়াছিল। তার পরিণতিতে ১১ দফা এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান।
যাহা হউক, মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর পর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞ দেখিয়া বোঝা গেল ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয় নাই। বরং ষড়যন্ত্রকারীরা আরও বেপরোয়া হইয়া উঠিতেছে।
‘মাইনাস টু’-র কথা বলিতেছিলাম। ইহা শুধু ১/১১ হইতে শুরু হইয়াছে তাহা নহে। সিপিবি সভাপতি মনজুর বহুদিন হইতে বিদেশি এইসব চক্রান্তের কথা তাহার লেখায়, বক্তৃতায় বলিয়া আসিতেছিলেন। শেখ হাসিনা আগের বার যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন কানাডা হইতে প্রাপ্ত এই ‘গুজব’ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে ওয়াকিবহাল করিয়াছিলেন। বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াকেও জানাইয়াছিলেন। সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাহার বহু পূর্বে এইসব ইঙ্গিত পাওয়া গিয়াছে। একদা সিপিবি’র সভাপতি প্রয়াত সাইফউদ্দীন আহমেদ মানিক বিএনপি’র মোর্শেদ খান সমভিব্যাহারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সহিত দেখা করিয়া ফিরিয়া আসিয়া পার্টিতে বলিয়াছিলেন হাসিনা-খালেদার দিন শেষ হইয়া আসিয়াছে। মার্কিনীরা ‘গুড গভার্নেন্স’ চায়। ডা. কামাল হোসেন আগাইয়া আসিবেন, আমরা তাহার সহিত যাইব। কে মনোনয়ন পাইবেন, কত কোটি কত লক্ষ টাকা পাইবেন সব ঠিক। জীবনে বহু ট্রেন মিস্ করিয়াছি, আর নহে। তাহারা পার্টিকে সময় দিলেন না। যাহারা পার্টি করিতে চাহে কয়েক মিনিটের মধ্যে তাহাদের বলিতে হইবে পার্টির অর্ধেক সম্পত্তি লইয়া তাহারা পার্টি করিতে রাজী কি না। তা না হইলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাহারা সকল সম্পত্তি হইতে পার্টিকে বঞ্চিত করিবে। সে আর এক লম্বা কাহিনী। হায়! শেষ পর্যন্ত মানিক ভাই-এর জীবন অবসান হইল। কিন্তু আশা নিয়া যে ট্রেনে উঠিয়া বসিলেন তাহা আর ছাড়িল না। এখন নাকি সেই ট্রেনের ইঞ্জিন আর চলিতে চাহিতেছে না। স্বয়ং ড্রাইভার গররাজী।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় ‘মাইনাস টু ফমুর্লা’ লইয়া এখনও তলে তলে কাজ চলিতেছে। ‘ইউ টার্ন-এর সময় কি কথাবার্তা হইয়াছিল, কি সমঝোতা হইয়াছিল বলা মুশকিল। তবে সমুদ্রে ব্লক লইয়া, তেল, গ্যাস, কয়লা লইয়া শেখ হাসিনা সরকার যে সব করিতেছেন তাহাকে কেহ শুভ লক্ষণ বলিতে পারিবেন না।
ক্ষমতায় আসিয়া বঙ্গবন্ধু ভারতে গিয়াছিলেন, মস্কো গিয়াছিলেন। শেখ হাসিনা প্রথমেই গেলেন সউদি আরব। বাদশাহ তাহাকে ভগিনী বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। তাহাতেই তাহার চাটুকাররা আহ্লাদে আটখানা। ভগিনী বলিয়া ডাকিলে নাকি তাহারা চিরকালের বন্ধু হইয়া যায়। কিন্তু মানুষ তো দেখিল সাউদি যাত্রার আগ মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রসিকিউটারদের নাম ঘোষণা স্থগিত হইয়া গেল। মার্কিন প্রতিনিধি নানা কথা বলিয়া গেলেন। গত ১৯ আগস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভায় শাহরিয়ার কবির নানা আশঙ্কা ব্যক্ত করিলেন। এমনকি সর্বজনশ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরী সভাপতির ভাষণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে অযথা বিলম্বের সমালোচনা করিয়া বলিলেন, আমার জীবদ্দশায় বিচার শুরু দেখিতে পারিব কি না জানি না। সরকারকে আলটিমেটাম দিতে হইবে। তারিখ বাধিয়া দিতে হইবে। জনগণকে লইয়া আন্দোলন করিতে হইবে, নতুন মিত্র খুজিতে হইবে।
মাঝে মাঝে শেখ হাসিনার সরকারকে ‘রাজনৈতিক সরকারের’ চাইতে বেশি ‘আমলা সরকার’ বলিয়া মনে হয়। রাজনৈতিক মন্ত্রীদের উপরও আমলা বসাইয়া দিয়াছেন। বিএনপি-জামাতের দলীয়করণ বাতিল করিতে গিয়া লেজে-গোবরে অবস্থা হইয়া গিয়াছে। এখন শুনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে চিহ্নিত প্রতিক্রিয়াশীলরা ঠাঁই পাইয়াছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর হইতে জরুরি কাগজপত্র উধাও হইয়া যাইতেছে। চাঁদাবাজকে চাঁদামুক্ত দেশ গড়িবার দায়িত্ব দিয়াছেন। কমিউনিস্ট পার্টির উপরই হউক বা জনগণের উপরেই হউক গাইবান্ধা, দুর্গাপুর, সর্বত্রই সন্ত্রাসের নায়ক এখন আওয়ামী লীগের ঝান্ডা তুলিয়া ধরিয়াছে। খুন, সন্ত্রাস, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়া চলিতেছে।
চিন্তা কি? দেশবাসী আছে আওয়ামী লীগের সাথে, সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর ছবি। দেশবাসী কাঁদিতেছে। অন্য জায়গার কথা বাদ দিলাম পিজি হাসপাতালে ডাক্তারদের নিকট হইতে হাজারো টাকা চাঁদা তুলিয়া শোকে মুহ্যমান বঙ্গবন্ধুর কর্মীরা বিরিয়ানি খাইতেছে। এদিকে জঙ্গিরা জামিন পাইতেছে। পাকিস্তানিপন্থি বলিয়া পরিচিত সর্বশ্রেষ্ট ঋণ খেলাপি এখন শেখ হাসিনার ডান হাত। জাফরুল্লাহ চৌধুরী পাকিস্তানের বন্ধু বলিয়া খ্যাত। ভারতের কাছে মাফসাফ চাহিয়া এখন নাকি পুনর্বাসিত। আমু, রাজ্জাক, তোফায়েল, সুরঞ্জিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হাসিনার সমালোচনা করিয়াছিলেন। সংস্কারপন্থি ছিল। শেখ হাসিনা সাহস করিয়া তাহার মন্ত্রীসভা হইতে তাহাদের এবং অন্য অনেককে বাদ রাখিয়াছেন। শেখ হাসিনা কি জানেন না, বন্ধুদেশ ভারতও ১/১১ এবং ‘মাইনাস টু’-র মধ্যে ছিল তিনি কি জানেন না, সমস্ত ঐতিহ্য পরিত্যাগ করিয়া মইন ইউ আহমেদকে ভারত লাল গালিচা সম্বর্ধনা দিয়াছিল? এইসব লইয়া ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় কথাবার্তা উঠিয়াছিল। উহাদের ইঙ্গিত ছাড়া ঐ চার নেতা ধুপধাপ করিয়া সংস্কার প্রস্তাব তুলিয়াছেন? শেখ হাসিনা কি জানেন, তিনি আগুন নিয়া খেলিতেছেন? এইসবের পাল্টা প্রতিক্রিয়া কি হইতে পারে? তিনি অনেকগুলি সাহসী পদক্ষেপ নিয়াছেন। কিন্তু পাল্টা আঘাত কীভাবে মোকাবিলা করিবেন একটু গভীরভাবে ভাবিয়া দেখিয়াছেন কি?
তাহার পিতাও অনেক কিছু করিয়াছিলেন। দুইবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ভারতের বিমানে তিনি দেশে ফিরিতে রাজী হন নাই। আসিয়াছেন ব্রিটিশ বিমানে। দল বা ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত ছাড়াই তিনি ওআইসি সম্মেলনে গিয়াছিলেন। তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে ইসলামী ও ভারত বিরোধী কার্ড ব্যবহার করা হইয়াছে। শহীদ তাজউদ্দীনকে বহিষ্কার করা হইয়াছে। আমেরিকাকে ‘ব্যালেন্স’ করার জন্য মোশতাককে বাকশালের মধ্যেও কাছে টানিয়া রাখিয়াছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উপর দিয়া খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হইয়াছেন। শেখ হাসিনা কি একই পথ ধরিয়াছেন? সব যেন গোল পাকাইয়া যাইতেছে।
মরিয়ার্টি সঠিকই বলিয়াছেন, বাঙালি ষড়যন্ত্র দেখিতে পায়। কিন্তু ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে না। তাহারা ষড়যন্ত্রকারীদের ভালোবাসা দিয়ে আপন করিয়া লইতে চায়, ষড়যন্ত্র হইতে বিরত করিতে চায়।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। নবাব তাহাকে বুকে টানিয়া লইয়া বলিয়াছিলেন “মীরজাফর আলী খান আপনি তো শুধু আমার আত্মীয় নন, পরম আত্মীয়ও বটে। বিপদের দিনে যে পাশে এসে দাঁড়াতে পারে সেইতো পরম আত্মীয়।” নবাব বিশ্বাস করিয়াছিলেন, মীরজাফর ষড়যন্ত্র হইতে বিরত হইবে। পরবর্তী ইতিহাস আমাদের জানা আছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও খন্দকার মোশতাকের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে খুব ভালো করিয়াই জানিতেন। ডালিম, রশিদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও তাহাকে জানান হইয়াছিল। শেখ সাহেব খুনি মোশতাককে বুকে টানিয়া লইয়াছিলেন। সামরিক বাহিনী হইতে বহিষ্কৃত মেজর ডালিমের অবাধ যাতায়াত ছিল শেখ সাহেবের বাসায়।
ইতিহাস হইতে নাকি শিক্ষা গ্রহণ করিতে হয়। তবে অনেকেই বলেন, ইতিহাসের বড় শিক্ষা হইতেছে, ইতিহাস হইতে কেহ শিক্ষা নেয় না।

No comments: