Pages

Sunday 21 February 2010

রাখালের কলাম : ঘর পোড়া গরু

রাখালের কলাম------------
ঘর পোড়া গরু

আবারও লাশের রাজনীতি শুরু হইয়াছে। লাশ কাহার তাহা লইয়াই প্রশ্ন উঠিয়াছে। আওয়ামী লীগ প্রশ্ন তুলিয়াছে, জিয়াউর রহমানের লাশ বলিয়া যাহা ঢাকায় কবরস্থ করা হইয়াছিল তাহা জিয়ার লাশ ছিল না। ডিএনএ পরীক্ষা করিতে হইবে। বিএনপি পাল্টা বলিয়াছে, টঙ্গিপাড়ায় যে লাশ কবরে আছে তাহা বঙ্গবন্ধুর নহে অন্য কাহারও। এতদিন পরে এইসব বিষয়বস্তু লইয়া তোলপাড়ে দেশ ও জনগণের কী যাইবে বা আসিবে উহা ওই দুই দলের নেতৃবৃন্দই বলিতে পারিবেন। আওয়ামী লীগ বরং বলিতে পারিত যে, জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের যে বিচার হইয়াছিল তাহা যথাযথভাবে হয় নাই। বিচার হইয়াছিল সামরিক আদালতে, গোপনে। বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সেদিন ফাঁসি দেওয়া হইয়াছিল। জেনারেল মঞ্জুরকে সেই দিন উত্তেজিত সৈনিকদের মত (গড়ন) হত্যা করে নাই। তাহাকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করিয়া হত্যা করা হইয়াছিল। খালেদা জিয়াও
পুনর্বিচারের কথা বলিয়াছিলেন। তাহার সন্দেহের তীর ছিল এরশাদের দিকে। কিন্তু পরে এরশাদকে দলে টানিতে দুই নেত্রীর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা শুরু হইল তাহার মধ্যে জিয়া হত্যার পুনর্বিচারের বিষয়ট বাদ পড়িয়া গেল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচারের রায় কার্যকরী হওয়ায় বিএনপি-জামাত মনে হয় খুবই গোস্বা করিয়াছেন। এই ব্যাপারে তাহাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখিয়া মনে হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকে তাহারা সঠিকই মনে করেন। শুধু তাহাই নহে কথাবার্তায় মনে হয় তাহারাই ওই হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত ছিলেন। লাশ বঙ্গবন্ধুর হউক আর অন্য কাহারও হউক না কেন তাহাতে বিএনপির রাজনীতির কী অগ্র-পশ্চাৎ হইবে তাহা বোঝা দায়।

বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুবই অরাজক অবস্থায় থাকিলেও জামাত তাহার সংগঠনকে যথেষ্ট অক্ষত রাখিতে পারিয়াছে। বিদেশি অর্থ ও মদদ লইয়া তাহারা সর্বত্র তাহাদের নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটাইতেছে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, সহযোগী তথাকথিত ইসলামী বিভিন্ন দল ও সংস্থা, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও প্রভৃতি সংস্থায় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগসহ প্রশাসনে অনুপ্রবেশ করা লোকজনের সহায়তায় জামাত তাহার তৎপরতা বৃদ্ধি করিয়া চলিয়াছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ, সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ৫ম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও পাকিস্তানের আইএসআই নেটওয়ার্কের উপর আঘাত জামাত ও পাকিস্তানপন্থীদের আতঙ্কিত করিয়া তুলিয়াছে।বাঁচিতে হইলে মারিতে হইবে, শেখ হাসিনার সরকারকে হটাইতে হইবে, এই পণ লইয়া জামাত ক্রমেই বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে। জামাত পরিবারের সহযোগী হিযবুত তাহরীহ বহু অর্থ ব্যয় করিয়া রং বেরংয়ের পোস্টারে ঢাকা শহর ছাইয়া ফেলিয়াছে। তাহাদের স্লোগান অবিলম্বে হাসিনা সরকারকে উচ্ছেদ করিতে হইবে। রাজশাহীতে জামাত-শিবিরের আক্রমানত্মক ভূমিকা এবং হত্যাকান্ড প্রমাণ করে তাহারা কতটা বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যা এবং অন্যত্র যেসব ঘটনা ঘটিতেছে তাহার লক্ষণ আরও ভয়ানক। জামাত এখন প্রকাশ্য রাজনীতিতে সুবিধা করিতে না পারিয়া হত্যা-খুন-সন্ত্রাসবাদের পথ গ্রহণ করিতেছে।
আরও উদ্বেগের বিষয়, পুলিশের মধ্যেও জামাত-বিএনপির সমর্থক আছে। তাহারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছে না। নানাভাবে জামাত-শিবিরকে প্রশ্রয় দিয়া চলিতেছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসিবার পর রাজশাহীর মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এবং জামাত বিএনপির লোকজনের সহিত সমঝোতা বৈঠক করিয়াছে। বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা বাদশাহও নাকি সেখানে ছিলেন। তোমরাও থাক, আমরাও থাকি এমনি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের কথা হইয়াছিল বলিয়া জানা গিয়াছে। রাজশাহীতে জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামী সেখানকার সিপিবি নেতৃবৃন্দ ওই সমঝোতা ও সাপ পুষিবার নীতির বিরুদ্ধে কথা বলিয়াছেন। কিন্তু তাহাদের কথায় কর্ণপাত করা হয় নাই। ইহার ফলে যাহা হওয়ার তাহাই হইয়াছে। জামাত শিবিরের বিষধর সাপ সুযোগ মতো আঘাত হানিয়াছে।

একদিকে পুলিশ ও প্রশাসনে সমস্যা, অপরদিকে ছাত্রলীগের মধ্যেও শিবিরের অনুপ্রবেশ। স্বয়ং আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ছাত্রলীগে জামাতি অনুপ্রবেশের কথা বলিয়াছেন। ইতঃপূর্বেও জামাতি অনুপ্রবেশের অভিযোগে ঢাকায় কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকে স্বয়ং শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে বহিষ্কার করা হইয়াছিল। ইহা কী করিয়া সম্ভব হয়? কারণ ছাত্রলীগে রাজনীতি নাই। টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, দখল-চাঁদাবাজি করিয়া অধিকাংশ নেতা নিজেদের পকেট ভারী করিতে ব্যস্ত। ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতাই বলিয়াছেন, হুর হুর করিয়া সব ছাত্রলীগে ঢুকিয়া পড়িতেছে। উহাদের অতীত কী, বর্তমান কী, চরিত্র কী তাহা যাচাই-বাছাই করার কোনো ব্যবস্থা নাই। টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির তৎপরতায় নেতাদের সহিত শরীক হইয়া ক্রমে ক্রমে নেতৃত্বে আসীন হইতেছে। উহাদের উপর অভিভাবক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। নিয়ন্ত্রণ করিবেই-বা কোন মুখে। তাহাদের অনেকেই তো মনোনয়ন বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য যেন এক মহাযজ্ঞ চলিতেছে। লক্ষ্য করিবার বিষয় এতক্ষণে ছাত্রদলের ভিতর হইতে উহাকে শিবির মুক্ত করিবার আওয়াজ উঠিয়াছে। ইহাতে কিছুটা বিস্মিত হইয়াছি বটে। তবে ইহা সাময়িক কৌশল না হইয়া যদি নীতিতে পরিণত হয় এবং বাস্তবায়িত হয়, তাহা হইলে কিছু আশা করা যাইবে।
জামাত-বিএনপি ও পাকিস্তানপন্থীরা যখন বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরাইয়া আনার প্রচেষ্টাকে বানচাল করিতে বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে, শিক্ষাঙ্গনে হত্যা, খুন, সন্ত্রাস, রগকাটায় মাতিয়া উঠিয়াছে তখন ছাত্রলীগ তাহাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করিবার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যেই টেন্ডার ও দখল লইয়া খুন-সংঘর্ষে লিপ্ত।
আওয়ামী লীগ সরকার চালাইতেছে। কিন্তু দল চলিতেছে না। দলের রাজনীতিও তেমন চোখে পড়ে না। দলের শহর অফিসে গেলে দেখা যাইবে তদবির পার্টির ভিড়। কে কোন ঠিকাদারি পাইবে, ব্যবসা পাইবে, টাকা পয়সা সুযোগ-সুবিধা কিভাবে ভাগ-বাটোয়ারা হইবে, কাহার লোক কোথায় ঢুকিবে, কোথায় নেতা হইবে তাহার জন্য তদবির লবীং। গ্রামাঞ্চলেও অনুরূপ। সেখানে আরও আছে সারের ডিলারশিপ, ভিজিএফ ও ডিজিএফ কার্ড, বিধবা ভাতা, চাউল গমের জন্য বাটোয়ারা। রাজনীতি কোথায়? নেতারা টেলিভিশন ও সেমিনারে বক্তৃতা বিবৃতি দিতেছেন। কিন্তু যেই বিপুল গণশক্তি দিয়া প্রতিক্রিয়াশীলশক্তিকে কার্যকরভাবে প্রত্যাঘাত করা যায় তাহাকে জাগ্রত করিবার জন্য দেশব্যাপী কোনো উদ্যোগ দেখি না। প্রতিক্রিয়াশীলমহল জনগণকে বিভ্রান্ত করিতে নানা প্রচারণা চালাইতেছে। শুধু পুলিশ দিয়া পিটাইয়া চিরুনী অভিযান দিয়া তাহাদের উৎপাটন করা যাইবে না। উহাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করিতে হইবে। প্রতিরোধের জন্য আমজনতার মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা করা প্রয়োজন, জনগণকে প্রতিরোধে শামিল করা প্রয়োজন। জনৈক আওয়ামী লীগ নেতাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলিলেন, আগামী মার্চে তাহারা নামিবেন।
তবে বিএনপি না নামিলেও জামাত এবং তার সহযোগীরা নামিয়াছে। তাহারা শহরে-গ্রামে সর্বত্র তৃণমূলে প্রচারণা চালাইতেছে। গ্রামগুলিতে এই শীতে ওয়াজ মাহফিল হইতেছে। সেখানেও অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মের নাম করিয়া জামাতি রাজনীতি ও প্রতিক্রিয়াশীল প্রচারণা চলিতেছে।
১৪ দলীয় জোটে কিছু বাম-প্রগতিশীল দল ও গ্রুপ আছে বটে তবে তাহাদের দিক হইতে বেশি কথা বলাও মুস্কিল। আওয়ামী লীগ বা সরকার বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলিলে শেখ হাসিনা তাহার মত করিয়া কাজ চালাইয়া যাইতেছেন।১৪-দলের (আসলে ৮-দল) মতামত লওয়া তো দূরের কথা তাহাদিগকে জানাইবার প্রয়োজনও কেহ উপলব্ধি করে না। এক বৎসর পরে ৮ দলের বৈঠক হইয়াছে বটে কিন্তু জোটভাবে তাহাদের কোনো তৎপরতা তেমন কিছু লক্ষ্য করা যায় না।
অন্যান্য বামপন্থীদের মধ্যে আবার কেহ কেহ মনে করেন জামাত-বিএনপির বিরুদ্ধে বলিলে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা হয়। তাহাদের কেহ কেহ নাকি মনে করেন রাজনৈতিকভাবে সত্যিকার বুর্জোয়া দল হইতেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি একটি প্ল্যাটফর্ম মাত্র। আওয়ামী লীগকেই আক্রণের লক্ষ্যবস্তু করিতে হইবে। আওয়ামী লীগকে সমালোচনা করিলেই বিএনপি’র সমালোচনা হইয়া যায়।

সিপিবি এবং অন্য কোনো কোনো দল বা শক্তি অবশ্য জামাত শিবির-বিএনপি ও পাকিস্তানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলমহলের বিরুদ্ধে তাহাদের সাধ্যমতো ভূমিকা রাখিতেছে। একই সাথে তাহারা আওয়ামী টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও সোচ্চার। সিপিবি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশব্যাপী জামাত শিবিরের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সমাবেশ করিয়াছে। সিপিবিকে আরও বেশি তৎপর হইতে হইবে। জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিতে হইবে। বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় রাখিবার জন্য জামাত-শিবির বিএনপিসহ পাকিস্তানপন্থীদের বেপরোয়া তৎপরতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের উপর ছাড়িয়া দেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের দোদুল্যমানতা, আপসকামিতা আমরা দেখিয়াছি। শ্রেণীগতভাবেই তাহাদের চরিত্র ওই রূপ। কমিউনিস্ট পার্টি চিরকাল এইসব জাতীয় ইস্যুতে আপসহীন ও লড়াই-সংগ্রামে অগ্রণী ছিল। এখনও থাকিতে হইবে। এই আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করিতেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, দলবাজি ও সন্ত্রাস। তাহার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হইতে হইবে কমিউনিস্টদের। আওয়ামী ভাবনার কিছু কিছু লোক বলিতে চাহেন, এই দেখ সিপিবি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি সমদূরত্বের নীতি গ্রহণ করিতেছে। ইহার অর্থ কী? জামাত-বিএনপির বিরুদ্ধে বলা যাইবে কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কোনো সমালোচনা করা যাইবে না! সিপিবি পাকিস্তানপন্থীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষবস্তু করিতেছে। উহারা ক্ষমতায় নাই। সমাজ হইতে তাহাদের মূলোৎপাটনের কথা বলিতেছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের আওয়াজ দেয় নাই। তবে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি উৎখাত করিতে বলিয়াছে। আওয়ামী মোহে আচ্ছন্ন তাহারা যদি নিজে গায়ে মাখাইয়া বলে, ঐ দেখ সিপিবি, জামাত-বিএনপিকে উৎখাত করিতে চায় দুর্নীতি, উচ্ছেদের কথা বলিয়া আওয়ামী লীগকেও উচ্ছেদ করিতে চায়। ইহাই সমদূরত্বের নীতি। এই সকল জ্ঞানপাপীদের বুঝাইবার চেষ্টা বৃথা। মোট কথা দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস এইসবের বিরুদ্ধে বলা যাইবে না। তবে ইহাও মনে রাখা দরকার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা তাহাদের অঙ্গসংগঠন যদি দুর্নীতি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি বন্ধ করিতে না পারে, তাহা হইলে দুর্নীতি লুটপাটের জিনিসপত্রসহ তাহারা বমাল উৎখাত হইবে। সিপিবি উহা ঠেকাইয়া রাখিতে পারিবে না। অতীতেও পারে নাই।
সিপিবির একটি রাজনীতি আছে। পাকিস্তানি ধারা প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়া মুক্তিযুদ্ধের ধারা প্রতিষ্ঠিত করা। মুক্তিযুদ্ধের ধারা মানে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের মূল ধারায় দেশকে পরিচালিত করা। এই লড়াইকে অগ্রসর করিতেই জামাত-বিএনপি ইত্যাদির বিরুদ্ধে অবস্থান। এই আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করিতেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নানা কর্মকান্ড। আন্দোলনকে শক্তিশালী করিতেই সেইসব অপকীর্তি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধেও সিপিবিকে সংগ্রাম গড়িয়া তুলিতে হইবে।
দেশের মানুষ সাধারণভাবে খুশি হয় যখন দেখে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হইতেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হইতেছে, বিদেশি শক্তির স্বার্থে যাহারা বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্ত করিয়া অস্ত্র পাচার করিয়াছে, বোমাবাজি ও হত্যাকান্ড ঘটাইয়াছে তাহাদের বিচার হইতেছে। কিন্তু ঘরে ফিরিয়া যখন দেখে চাউল, ডাল, তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাহার ঘরে খাওয়া নাই, সার নিয়া দুর্নীতি, সারে ভেজাল, বেকার সন্তানের কাজ হইতেছে না, কারখানা বন্ধ হইয়া যাওয়ায় সে বেকার হইয়া পড়িতেছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সঙ্কট বাড়িতেছে, জনজীবনের সমস্যাগুলি সমাধান না হইয়া ক্রমে বৃদ্ধি পাইতেছে তখন মানুষ হতাশ হইয়া যায়, কষ্ট লাগে, ভাবে এত আশা লইয়া তাহারা ভোট দিল কিন্তু তাহার জীবনের সমস্যাগুলির তো কোনো সমাধান হইল না। কী করিবে, কোথায় যাইবে! হতাশা ক্ষোভে এবং ক্ষোভ বিক্ষোভে পরিণত হয়। সেই বিক্ষোভের হাওয়া প্রতিক্রিয়াশীলদের পালে লাগে। গনেশ উল্টাইয়া যায়। আবার থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর।কমিউনিস্টদের তাই একই সাথে শ্রেণী শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে, রুটি-রুজি তথা ভাত-কাপড়- জমি কাজের জন্য স্থানীয়, আংশিক জাতীয় আন্দোলনে অগ্রণী হইতে হইবে।
আমরা লক্ষ্য করিতেছি যে, লাশ লইয়া যেমন রাজনীতি চলিতেছে তেমনি নামকরণ লইয়াও চলিতেছে তুলকালাম। দেশে যখন নাজুক পরিস্থিতি তখন আওয়ামী লীগ যেন ইচ্ছা করিয়াই নানা ইস্যু বিএনপি’র হাতে তুলিয়া দিতেছে। বিমান বন্দরে জিয়ায় নাম পরিবর্তন করিয়া শাহ জালালের নাম দেওয়া হইয়াছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে সুড়সুড়ি দেওয়া হইয়াছে। অতীতে বিএনপি-জামাত মহল টাকার উপর হইতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়া তদস্থলে মসজিদের ছবি দিয়াছিল। আওয়ামী লীগও তাহাই করিল। রাজনীতি মতাদর্শ তাহাদের নিকট বড় কথা নহে। বিএনপি তাহাদের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী। তাহাকেই আঘাত করিতে হইবে। যেই কারণে আমরা অতীতেও দেখিয়াছি আওয়ামী লীগ জামাত ও চরম প্রতিμিয়াপন্থীদের বিচ্ছিনড়ব করিবার পরিবর্তে বিএনপি’র বিরুদ্ধে জামাতের সহিত কৌশলগত ঐক্য করিতে দ্বিধা করে নাই, মৌলবাদীদের সহিত ৫ দফা চুক্তি করিয়াছে।
বিএনপি সংসদে আসিয়াছে। মানুষ কিছুটা হইলেও আশ্বস্ত হইয়াছিল। কিন্তু রাজনীতিতে আবারও সংঘাত-সংঘর্ষ কনফ্রন্টেশন বৃদ্ধি পাইতেছে। জামাত প্রকাশ্য রাজনীতি সঙ্কুচিত করিয়া হত্যাসন্ত্রাসের গোপন ও অন্ধকার পথে যাইতেছে।

শেয়ার বাজারের জনৈক ব্যবসায়ী বলিতেছিলেন, মনে হইতেছে রাজনীতি আবারও কনফ্রন্টেশনের দিকে ধাবিত হইতেছে। আর একটি ওয়ান ইলেভেনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হইতেছে। মনে পড়িল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে এক বক্তৃতায় বলিয়াছিলেন, ওয়ান ইলেভেন শক্তি আবারও ফিরিয়া আসিবার চেষ্টায় আছে। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের জন্য শেখ হাসিনা তখনকার সরকারি দল বিএনপি-জামাতকে দায়ী করিয়াছিলেন। এইবার কে কাহাকে দায়ী করিবেন জানি না।

শেখ সাহেবকে হত্যা করা হইল, জিয়াও হত্যাকান্ডের শিকার হইলেন। সাম্প্রতিক কালে দেখিলাম খালেদা-হাসিনা একে অপরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুইজনই পাশাপাশি বাড়িতে কারারুদ্ধ থাকিলেন। কতই না বিরোধ, কতই না মিল! রবি ঠাকুরের কবিতার একটি লাইন মনে পড়িয়া গেল।
‘রাখিলে বিচ্ছিন্ন করি অর্জুনে আমারে-
তাই শিশুকাল হতে টানছে দোঁহারে
নিগূঢ় অদৃশ্য পাশ হিংসার আকারে
দুর্নিবার আকর্ষণে।

বিএনপি বলিবে আমরা আর কী করিতে পারি। যাহা ঘটিতেছে তাহাতে আমাদের প্রতিক্রিয়া এই রূপ হওয়াই তো উচিত। আওয়ামী লীগ বলিবে যাহা সঠিক, যাহা উচিত তাহাই আমরা করিতেছি। কিন্তু উচিত-অনুচিত মিলিয়া আর এক ঘটনা ঘটিয়া যাইতেছে। এইসব দেখিয়া উদীয়মান ব্যবসায়ীর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব একেবরে উড়াইয়া দেওয়ার সাহস পাইলাম না। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখিলেও ভয় পায়

No comments: