Pages

Friday 2 March 2012

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহতের বিরুদ্ধে দরকার জাতীয় ঐকমত্য ও গণপ্রতিরোধ

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহতের বিরুদ্ধে দরকার জাতীয় ঐকমত্য ও গণপ্রতিরোধ

একতা সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মনজুর


একতা প্রতিবেদক : সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাপ্তাহিক একতার সঙ্গে মতামত ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সভাপতি মনজুরুল আহসান খান। আলোচনায় মনজুর দেশের বর্তমান রাজনীতি কী সংঘাতের দিকে যাচ্ছে-এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখন তো নানাদিক থেকেই একটা সংঘাতময় অবস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে বলে মনে হয়। জামায়াত ইসলামী তো অন্যান্য মৌলবাদী গোপন ও সশস্ত্র দল ও গ্রুপের সাথে একজোট হয়ে তাদের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে বোমাবাজি এবং কমান্ডো ধরনের হামলার মূল হোতাও জামায়াত। তারা বিএনপি’র ঘাড়ে সাওয়ার হয়েছে। পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে শক্তিশালী মহল নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মনজুর।

এই সংঘাত এড়াবার কী কোনো সম্ভাবনা দেখেন কীনা জানতে চাইলে মনজুর বলেন, বিএনপি’র ঢাকা-চট্টগ্রাম লং মার্চের সময় দেখেছি অনেক বাকযুদ্ধ এবং হুমকি-ধামকি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। আগামী ১২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি মহাসমাবেশ ডেকেছে। একই দিন সরকারি দল আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়েছে। এ নিয়ে অনেক উত্তেজনাকর এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য উভয়পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক, আওয়ামী লীগ কি কর্মসূচি দেওয়ার আর কোনো তারিখ পায় নাই? কর্মসূচি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছিলেন, বিএনপিকে ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখেই আটকে দেওয়া হবে। এটা কোনো গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। তবে কয়েকদিন বাকযুদ্ধের পর এখন সরকারি দলের অনেকেই বলছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকলে পুলিশ সেটা দেখবে। বিএনপি সরকারি দলের দিকে আঙ্গুল তাক করে সরাসরি বলেছিলো, সরকারি দলের হাত-পা লোলা করে দেবে। এখন তারাও বলছে, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হবে। তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। এ থেকে মনে হয়, ১২ মার্চের কর্মসূচি ধরে যে সংঘাতপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছিলো সেটা হয়তো এড়ানো সম্ভব হতে পারে। কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হলে এবং উভয়পক্ষের আন্তরিকতা থাকলে সংঘাত এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন বামপন্থী এই শীর্ষনেতা।

তবে জামাত যদি অতীতের মতো ভিতর থেকে চোরাগোপ্তা পথ অবলম্বন করে? এ বিষয়ে মনজুর বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম লং মার্চের সময়ও জামাত এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলো একটা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছিলো। এখনো সেই বিপদ আছে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার, জামায়াতের ব্যাপারে সরকার এবং আওয়ামী লীগ অনেকটা নমনীয় বলে মনে হয়। এর আগে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের গোপন সমঝোতার চেষ্টা সম্পর্কে পত্র-পত্রকিায় খবর বেরিয়েছিলো। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, জামায়াতকে যুদ্ধপরাধীমুক্ত করে পুনর্গঠিত হতে হবে। তিনি নাকি জামায়াতকে সহযোগিতা করবেন। জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকও অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন। পাশাপাশি সময়েই দুই বিপরীত আদর্শের দুই দলের দুই নেতা একই ভাষায় কথা বললেন।

এ বিষয়ে মনজুর আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম করছে। কিন্তু সব সময়ই দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমেরিকা তার স্বার্থেই জামায়াতকে রক্ষা ও কাজে লাগাতে চায় বলে মন্তব্য করেন সিপিবি সভাপতি।

সম্প্রতি সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেইক ঢাকা সফরে এসেছেন। যদিও এসময় তিনি অন্যান্য বিষয়েও কথা বলেছেন। তবে ব্লেইক দু’দলের মধ্যে সমঝোতামূলক সংলাপ আয়োজনের কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনজুর বলেন, রবার্ট ব্লেইক বাংলাদেশে এসে প্রকাশ্যে-গোপনে এবং ইঙ্গিতে অনেক কথাই বলেছেন। টিফা চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে চাপ দিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বিরাজনীতিকীকরণ এবং তথাকথিত সিভিল সোসাইটির সরকার এবং ড. ইউনুস সম্পর্কিত যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী কথাবার্তা বলেছেন।

সিপিবি সভাপতি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতজানু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দু’দলকে আপোষ আলোচনায় বসতে বলেছেন ব্লেইক। এর আগেও তারা এ ধরনের কথা বলেছেন এবং উদ্যোগও নিয়েছেন। যাদের দাপটে ‘বাঘে-মহিষে একঘাটে পানি খায়’, তারা নাকি দুই দলের টানাপোড়ণের কোনো মীমাংসা এখনো করতে পারেন নাই। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলো। পরে তারাই আবার এক-এগারোর ব্যাপারে কলকাঠি নেড়েছে। তারাই চিলো এক-এগারোর নাটের গুরু। ‘চোরকে বলে চুরি করো, গৃহস্থকে বলে সজাগ থাকো’। যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে মানুষের এ ধরনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করাটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বভাবজাত। বাংলাদেশের ব্যাপারেও এটা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে মনজুর বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বিপদজ্জনক। এই হস্তক্ষেপ কখনোই সেসব দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। নিজেদের গ্লোবাল স্বার্থ হাসিলের জন্যই এসব করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মনজুর বলেন, তবে আমরা মনে করি, বাইয়ের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি আলোচনায় বসা উচিত। এটা আমরা এ কারণেই বলি, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ আমলে সামরিক কেয়ারটেকার অথবা অন্যকোনো তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপের ফলে বারবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যহত হয়েছে। এর ফলে দেশি রাজনীতি এবং চূড়ান্ত বিচারে সেনাবাহিনীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার যেটুকু অবশিষ্ট আছে তা ব্যহত হওয়ার অর্থ সামরিক শাসন বা যেকোনো নামেই হোক নির্ভেজাল স্বৈরশাসন। সেটা বিশেষ করে বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের আন্দোলনকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সিপিবি সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ জোট, বিএনপি জোট এবং বামপন্থী জোট একসাথে মিলেই বিশাল গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে সামরিক স্বৈরশাসনকে হটিয়ে দিয়েছিলাম। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজ আমাদের মধ্যে শত বিরোধ সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যহত করার বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐকমত্য ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলাটা খুব জরুরি বলে মনে করেন মনজুর।

No comments: