Pages

Tuesday 31 January 2012

২৭ জানুয়ারি সিপিবি’র ঢাকার জনসভায় মনজুর

প্রিয় কমরেডগণ, ভাই ও বোনেরা

বহুদিন পর পার্টির সারাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা ঢাকায় সমাবেশে মিলিত হয়েছি। ২০০১ সনে এই মাসেরই ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে আমরা একত্রিত হয়ে ছিলাম। সেদিন হিমাংশু, মজিদ, মোক্তার, হাশেম ও বিপ্রদাস শহীদ হয়েছিল অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ১১ বছর পার হয়ে গেল, সে হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নি। বিচার একদিন হবেই। ৪০ বছর পরও যুদ্ধাপরাধীরা পার পায় নি আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, পল্টন বোমা হামলার সাথে জড়িতদেরও বিচার হবে। কেউ রুখতে পারবে না। আমরা সিপিবি উদীচী-ছায়াটনসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করার দাবি জনাই সরকারের কাছে। বিচার করতে হবে রতন সেন, মানিক সাহা,
আলফ্রেড স্বরেণ, সত্যবান হাজং, আব্দুল্লাহসহ সকল হত্যাকাণ্ডের। ক্রসফায়ার, গুমহত্যা বন্ধ করতে হবে। সকল সাথে জড়ি ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে সরকারের বিচার হবে গণ আদালতে। জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই আদালত গড়ে উঠবে। আন্দোলনের সামনে থাকবে কমিউনিস্ট পার্টি কৃষকের কাস্তে এবং শ্রমিকদের হাতুড়ি খচিত লাল পতাকা নিয়ে। যে পতাকা বীর মুক্তিযুদ্ধো কৃষক নেতা হিমাংশু মৃত্যুর সময় শক্ত হাতে ধরে রেখেছিল। এই পতাকা মানবমুক্তির পতাকা, শোষন মুক্তির পতাকা, সমাজতন্ত্রের পতাকা। এই পতাকা মণি সিংহ, ফরহাদ, বারিণ দত্ত, সত্যেন সেন, রণেশ দাশ, হাতেম আলী খান, জিতেন ঘোষ, জ্ঞান চক্রবর্তী, ইলা মিত্র, প্রসাদ রায়, হেনা দাস, আব্দুস সাত্তার, সয়েরুদ্দীন বরকত, সহিদুল্লা কায়সার, জহির রায়হান, মুনির চৌধুরী, শহীদ তাজুল, আজাদ, মুনির, মতিউল কাদের, রাজু, টিটোসহ অনেকের। কার্ল মার্কস, লেনিন, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, চেগুয়েভারাসহ হাজার হাজার হাজার মুক্তি সংগ্রামীর নিশান এটা। দেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে, দেশের সামনে সঙ্কট, জনজীবনের সঙ্কট দ্রব্যমূল্য, ঘর ভাড়া, যাতায়াত, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাজার অর্থনীতি- টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে সব কিছু। তেল, গ্যাস, কয়লা, বিদ্যুৎ ও পানির সঙ্কট। বিদেশিদের কাছে ভূ-পৃষ্ঠের এবং সমুদ্রের তেল, গ্যাস তুলে দেয়া হচ্ছে। দেশের তেল-গ্যাস-কয়লা, খনিজ সম্পদ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত অনেক দিনের। বর্তমান ও বিগত সরকারগুলোর ছত্রছায়ায় এরা আমাদের এসব সম্পদ লুটপাট করতে তৎপর। বামপন্থীরা আমরা এক হয়ে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। ইতোমধ্যে কিছু বিজয় অর্জিত হয়েছে। এই সম্পদের উপর শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। আমরা গ্যাস কয়লা লুটপাট হতে দেব না। আমাদের দেশের গ্যাস ৩০ গুণ বেশি দামে কিনতে হয়। কুইক রেন্টালের নামে কুইক পকেট ভারি বন্ধ করতে হবে। পিএসসি’র নামে বিদেশিদের হাতে গ্যাস সম্পদ তুলে দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। বাপেক্সকে শক্তিশালী ও জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে হবে। ক্ষমতায় যারা যায় সবাই খাই খাই পার্টি। তাদের ক্ষুধা সীমাহীন, ওরা সব খেতে চায়। পুকুর, খাল বিল জলাশয় নদী সমুদ্র দখল হয়ে যাচ্ছে। বন উজার হচ্ছে। আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে ছিল। আমরা প্রতিবেশী সকল দেশের সাথে, সার্কভূক্ত দেশগুলির সাথে আমরা বন্ধুত চাই। ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চাই। কাটাতারের বেড়ার বন্ধুত্ব নয়। সীমান্তে অব্যাহত হত্যাকা- নয়। তিস্তা ফারাক্কা, টিপাই মুখ বা অন্যান্য স্থানে অভিন্ন নদীর উপর একতরফা হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নয়। ব্রিটিশরা আমাদের ভাগ করে শাসন করেছে। আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে ইরাককে যুদ্ধে নামিয়েছে। পরে ইরাককে ধ্বংস করেছে। এখন ইরানকে আক্রমণের পায়তারা করছে। আমেরিকা পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ উস্কে দিচ্ছে, তাদের অস্ত্র বিক্রি করছে। আমেরিকার ফাঁদে পা দিলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে বহুমাত্রিক পারস্পরিক সহযোগীতা গড়তে হবে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কব্জা মজবুত করতে তারা আজ বেপরওয়া হয়ে উঠেছে। ওরা সুযোগমত সাম্প্রদায়িক, তালেবান ও জঙ্গী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকেও কাজে লাগায়। ওরা একে অপরের খালাত ভাই। সম্প্রতি সেনা বাহিনীতে একটি অভ্যূত্থান প্রচেষ্টা দমন করা হয়েছে বলে জানান হয়েছে। অতীতে সেনা বাহিনীকে ব্যবহার করে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। দুজন রাষ্ট্রপতি, জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ অনেককে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে। একের পর এক ক্যু পাল্টা ক্যুর ফলে বহু সেনা সদস্য অকালে জীবন হারিয়েছেন, চাকুরী হারিয়েছেন। দেশের মানুষ আর এসব দেখতে চায় না। দেশের মানুষ চায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনী দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক। দেশ রক্ষার দায়িত্বে মননিবেল সেনা বাহিনী সকল বিতর্কের উর্দ্ধে থাকুক। ৪০ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে সেনা হস্তক্ষেপ কোন সঙ্কট সমাধান করতে পারে না। রাজনীতি, দেশ, সেনাবাহিনী সবাই তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেনাবাহিনী বলেছে তারা এই ধরনের ঘটনার পূনরাবৃত্তি চায় না। এ ধরনের যে কোন অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে। আমরা সাধুবাদ জানাই। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আজ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাটা জরুরি। অতীতে দুই বড় দল ও সেনা হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক কালেও দুই নেত্রী সহ অনেকেই একসাথে জেল খেটেছেন। দেশের দূর্ভাগ্য, এত কিছুর পরও মনে হচ্ছে তাদের শিক্ষা হয় নাই। আমরা সবাই মিলেই গণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমাদের মধ্যে মত পার্থক্য আছে বিরোধ আছে, থাকবে। আমরা সবার কাছে আবেদন জানাই সে বিরোধ যেন এমন পর্যায়ে না যায় যাতে করে প্রতিক্রিয়াশীলরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার সুযোগ পায়। দেশ ৪০ বছর ধরে দেশ ও জাতি যে সঙ্কটের আবর্তে ঘুর পাক খাচ্ছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে আজ সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য সামনে রেখে একটি বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করতে হবে। আমাদের সামনে তিন শত্রু। ১। সাম্রাজ্যবাদ, শোষন-লুটপাট-আধিপত্যকে পরাভূত করতে হবে। ২। স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক জঙ্গী সন্ত্রাসীদের হটাতে হবে। ৩। লুটেরা ধনিকদের উচ্ছেদ করতে হবে। ধনিক শ্রেণীর স্বার্থে প্রচলিত নীতি পাল্টে দিয়ে শ্রমিক কৃষক জনগনের স্বার্থে গণমুখি নীতি, বামপন্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা শিল্প কৃষি অর্থনীতির বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টিকারী দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারী, সিন্ডিকেট ফটকাবাজারীর বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা শিল্পোৎপাদন, সুস্থ ব্যবসা এবং সম্পদ বৃদ্ধিতে নিয়োজিত ধনিকের বিরুদ্ধে নই। আমরা তাদের পক্ষে। উন্নয়নের পথে বাধাগুলি দূর করতে সিপিবি আন্দোলন চালিয়ে যাবে। কয়েক যুগ ধরে দেশে যত সরকার এসেছে সবাই ধনিকদের স্বার্থে গণবিরোধী নীতি নিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে জনগণের আশা চূড়মার হয়ে গেছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, মোস্তাক পন্থীদের প্রভাবে আওয়ামী লীগ আজ ব্যার্থ । অপরর দিকে বিএনরি ঘারে জামাতের ভূত। নিকট অতীতে বিএনপির দুর্নীতি লুটপাট আমরা দেখেছি। জামাত আজ জঙ্গীদের নিয়ে, বোমা, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, সশস্ত্র ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের এই সঙ্কট মুহূর্তে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান জানাই।
১। সঙ্কটের মৌলিক সমাধানের জন্য সকল বাম, গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকল্প গড়ে তুলতে হবে আন্দোলনে নামুন। বামপন্থীরা ছুৎমার্গ ছারুন। এক হন। বড় দুই দল নয়, ১/১১ নয়, বামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলেই দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে। দেশের মানুষ চল্লিশ বছর বিভিন্ন দলকে দেখেছে। সঙ্কট দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে। একমাত্র বামপন্থী প্রগতিশীলদের নেতৃত্বে গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সঙ্কট মুক্তি সম্ভব।
২। সমাজের বৈপ্লবীক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক, যুদ্ধাপরাধী জঙ্গী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
৩। সেই সাথে গণতান্ত্রিক ধারাকে নস্যাত করার জন্য দেশী বিদেশী চক্রান্ত প্রতিহত করতে জাতীয় ঐক্যমত ও জনতার প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

No comments: